বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার সহজ পদ্ধতি এবং পুষ্টিগুন

 কিসমিস হল এমন একটি শুকনো ফল যা আমাদের খাবারের তালিকায় নানা ধরনের ব্যাপারে আসে। পোলাও পায়েস কেক কিংবা পুষ্টিকর স্ন্যাকস তৈরিতে কিসমিসের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণভাবে আমরা বাজার থেকে কিসমিস সংগ্রহ করে থাকি এটি কিন্তু বাজারের পরিবর্তে এই কিসমিস আমরা বাড়িতেও তৈরি করতে পারি।

বাড়িতে-কিসমিস-তৈরি-করার-সহজ-পদ্ধতি

 আজকে আমরা আপনাকে বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার জন্য একটি পরিপূর্ণ গাইড তৈরি করে দেবো যা থেকে কিভাবে কিসমিস বাড়িতে তৈরি করা যা। এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে।

পেজ সূচিপত্রঃবাড়িতে কিসমিস তৈরি করার সহজ পদ্ধতি

কিসমিস কি এবং কেন এটি পুষ্টিকর

কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর। যা আমরা অনেকেই জানিনা আমরা ভুলবশত ভেবে থাকি যে কিসমিস এভাবেই হয়তোবা গাছে ধরে কিন্তু না এটি প্রাকৃতিকভাবেই একটি আঙ্গুর ফল। কিসমিস প্রকৃতভাবে আঙ্গুরের পানি শুকিয়ে তৈরি করা হয়। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি,আঁশ,আয়রন,পটাশিয়াম এবং এন্টি অক্সিডেন্ট এগুলো আমাদের শরীরকে শক্তি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কিসমিস একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর শুকনো ফল যা ড্রাই ফরুট হিসেবে পরিচিত এটি খেজুরের মতই বেশি জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য। কিসমিসের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে নিচে তুলে ধরা হলো কিছু আলোচনা।
কিসমিসের পুষ্টিগুণ
শর্করা
কিসমিস প্রাকৃতিক শর্করা বা সুগারের একটি ভালো উৎস। এটি শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায় যাতে আপনার শরীর খুব দ্রুত রক্ত সঞ্চালন করতে পারে।
ডাইরেটারি ফাইবার
কিসমিস হজমের সমস্যার সমাধানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর। এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ও খনিজ
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ভিটামিন বি পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে এগুলো হার এবং মাংসপেশী শক্তিশালী করে তোলে।
বাড়িতে-কিসমিস-তৈরি-করার-সহজ-পদ্ধতি


এন্টিঅক্সিডেন্ট
কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের কোষকে ক্ষতিকর হাত থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে।
লোহা
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কিসমিসের গুরুত্ব অপরিসীম এটি হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে যাতে আপনার শরীর সুস্থ থাকে।
কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কিসমিস মূলত আপনার শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখ্‌ ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা  বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
, মতামত অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যকর তবে অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে পরিমাণ বোঝে খাওয়া উচিত। কিসমিস সবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে সাহায্য প্রদান করে।

বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার সুবিধা

, বাজার থেকে কিসমিস কেনার তুলনায় বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে। বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার মূল বিষয়বস্তু হলো রাসায়নিক মুক্ত তৈরি করা যায় কোন প্রিজারভেটিং বা রং থাকে না, খুবই সাশ্রয়ী এটি বাজারের তুলনায় বাড়িতে তৈরি করলে সস্তা এবং স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ এবং ছাদে পার্থক্য নিজেদের পছন্দমত আঙ্গুর ব্যবহার করে কিসমিস তৈরি করলে স্বাদ আরো ভালো হয়। কিসমিস নিজের হাতে তৈরি করার আনন্দই আলাদা রয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যদের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যাবে এতে নতুন সৃজনশীলতা ও নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াবে। বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার সময় তাজা ও নতুন কিসমিস এটি দীর্ঘ সময় ভালো থাকে। দোকানের তুলনায় বাড়িতে কিসমিস খুব স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে। বাড়িতে কিসমিস তৈরি করলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলোঃ
কিসমিস তৈরির জন্য খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন নেই।
তাজা বা সদ্য গাছ থেকে তুলে আনা আঙ্গুর বা বীজবিহীন আঙ্গুর হলে খুব ভালো হয়।
পরিষ্কার পানি বা বিশুদ্ধ পানি
বড় থালা বা প্লেট
ছুরি বা কাঁচি আঙ্গুরের ডগা কাটার জন্য
সুতার কাপড় বা মশারি ধুলো এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করতে।
এগুলো দিয়েই তৈরি হবে আপনার কাঙ্খিত কিসমিস।

বাড়িতে কিসমিস তৈরির সহজ পদ্ধতি

বাড়িতে কিসমিস তৈরি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল আঙ্গুর নির্বাচন করা। তাজা এবং বিজবিহিন আঙ্গুর ব্যবহার করায় ভালো হবে আঙ্গুরের রং সবুজ বা কালচে যে কোন একটি হতে পারে।
আঙ্গুর পরিষ্কার করা
প্রথমে আঙ্গুর গুলি ঠান্ডা পানিতে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত যাতে কোন জীবাণু না থাকে।
ডগা থেকে আঙ্গুলগুলোকে একে একে আলাদা করে ফেলুন এবং কোন পচা বা নষ্ট আঙ্গুর থাকলে তা ফেলে দিয়ে।
আঙ্গুলগুলো পানিতে সিদ্ধ করা
একটি পাত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যতটুকু প্রয়োজন পানি গরম করুন এবং সেই পানিতে আঙ্গুলগুলো ঢেলে দিন।
দুই তিন মিনিট ধরে সেদ্ধ করুন এতে আঙ্গুরের খোসা নরম হয়ে যাবে এবং দ্রুত শুকাবে।
শুকানোর প্রক্রিয়া 
কিসমিস শুকানোর জন্য কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূর্যের আলোতে
একটি পরিষ্কার থালা বা প্লেট আঙ্গুর গুলোকে একে একে ছড়িয়ে দিন।
সূর্যের নিচে রাখুন এবং দিনে একবার উল্টে দিন যাতে সমান ভাবে শুকায়।
চার থেকে সাত দিনের মধ্যে আঙ্গুলগুলো শুকিয়ে কিসমিসে পরিণত হয়ে যাবে।
কৃত্রিম উপায় বা ওভেন
৫০ বা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওপেন গরম করুন
আঙ্গুলগুলো থালা বা প্লেটে রেখে তিন থেকে চার ঘন্টা বের করুন
প্রতি ঘন্টায় পর্যবেক্ষণ করুন যাতে পুড়ে না যায়
ডিহাইড্রেটর
যদি আপনার বাড়িতে একটি ডিহাইড্রেটর থাকে তবে এটি ব্যবহার করুন
ডিহাইড্রেটর৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কিসমিস তৈরি হয়ে যাবে।
কিসমিস সংরক্ষণ
বাড়িতে-কিসমিস-তৈরি-করার-সহজ-পদ্ধতি


শুকনো কিসমিস ঠান্ডা হলে এটি একটি কন্টেইন্ডারে সংরক্ষণ করুন।
এটি শুকানো এবং ঠান্ডা স্থানে রাখুন যাতে দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
বাড়িতে কিসমিস তৈরি করা আসলে খুব সহজ এবং এটি খুব মজাদার একটি কাজ এটি শুধু খরচ কমায় না বরং আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর ও প্রাকৃতিক বিকল্প প্রদান করে। উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই নিজের বাড়িতে কিসমিস তৈরি করতে পারবেন এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারে এটা ব্যবহার ও উপভোগ হোক করতে পারবেন। আপনার নিজস্ব হাতে কিসমিস দিয়ে সৃজনশীল কিছু তৈরি করতে দেরি করবেন না।

কিসমিস তৈরিতে কিছু দরকারি টিপস

আঙ্গুরের খোসা নরম করতে পানিতে সামান্য লেবুর রস যোগ করতে পারেন। রোদে শুকানোর সময় ধুলো রক্ষা করার জন্য পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে রাখুন। কিসমিস তৈরির সময় তাড়াহুড়া করবেন না ধীরে ধীরে শুকালে কিসমিসের স্বাদ বেশি ভালো হবে। কিসমিস ব্যবহার করার জনপ্রিয় কিছু রেসিপি রয়েছে যা আপনি বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে পরিবেশন করতে পারে যেমন কিসমিস দিয়ে পোলাও আরো সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হয়, কিসমিস ভিজিয়ে তা থেকে তৈরি পানি ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সক্ষম। কিসমিস আবার কেক কুকিস তৈরিতে এটি অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে গৃহীত।
কিসমিসের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত দিক
কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি থাকায় এটি দ্রুত শক্তি জোগাতে সক্ষম। কিসমিস হজম শক্তিতে খুবই উন্নত, রক্তস্বল্পতা দূর করে থাকে কিসমিস ও আইরনের ভালো একটি উৎস হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের যত্ন ও হাড় মজবুত করতে সক্ষম কিসমিস।

আমাদের শেষ কথা

বাড়িতে কিসমিস তৈরি করার সহজ পদ্ধতি কি তা আপনাদের উপরোক্ত বিষয়ের ভেতরে বলেছি, বাড়িতে অতি সহজেই আপনি চাইলে কিসমিস তৈরি করতে পারেন এতে পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকার হবে। বাজার তুলনায় বাড়িতে কিসমিস তৈরি করলে ক্ষতিকর দিকগুলো কম থাকবে। ডিসমিস শুধু একটি সুস্বাদু শুকনো ফল নয় এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি আপনার শরীরকে শক্তি যোগায় রক্তস্বল্পতা দূর করে হজম শক্তি উন্নত করে এবং হাটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক শর্করা ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামি্‌, খনিজ ও এন টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর এই খাবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা উচিত।
বাড়িতে কিসমিস তৈরি করলে রাসায়নিক মতো এবং স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত কিসমিস পাওয়া যাবে। এটি স্বাস্থ্য সচেতন দের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ এবং অর্থশাস্ত্রই পছন্দ নিও একটি খাবার।
সঠিক পরিবারে কিসমিস খেলে এটি আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রাকৃতিক পুষ্টির। সহজ উৎস হিসেবে আপনার জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ হতে পারে। সুস্বাস্থ্যের জন্য বাড়িতে তৈরি কিসমিস কে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন এবং প্রাকৃতিক পুষ্টির উপকারিতা ভোগ করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url